ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নারী আসন ও সংসদ পদ্ধতি নির্ধারণে ঐকমত্য হয়নি মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধানকে টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি : নাহিদ ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৩০ ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ গঠনের প্রস্তাবনায় আইনজীবীদের ক্ষোভ নারী আসন দ্বিগুণ করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে ভোট চায় বিএনপি বিএনপি-এনসিপি বাকযুদ্ধে তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি এই সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে-আইন উপদেষ্টা জনমনে বাড়ছে আস্থাহীনতা প্রতিনিয়তই জুলাই যোদ্ধাদের স্মরণ করতে হবেÑ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তনে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবেÑ রিজওয়ানা কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক বাড়লেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেই মিটফোর্ডের ঘটনায় তাবেদার শক্তির এদেশীয় ধারকবাহক জড়িত- রিজভী কুমিল্লায় ভুল সিগন্যালে ট্রেন না থামায় ৪ জন সাময়িক বরখাস্ত জামালপুরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি জুয়েল বৃষ্টিতে রাস্তায় চলাচলে জনদুর্ভোগ চরমে চরমপন্থীদের হাতে খুন যুবদলের মাহবুব, ভিডিও ফুটেজে ঘাতকরা শনাক্ত ভারতীয় ৩৪ জেলে ও ২ ট্রলার আটক ওয়ারীতে কিশোরকে হত্যাচেষ্টা, হামলা প্রতিহত করলো জনতা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি হলো দ্বিগুণ দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা সতর্ক থাকার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশায়

  • আপলোড সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ১২:৫১:২১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ১২:৫১:২১ অপরাহ্ন
ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশায়
রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। নগরীর ব্যস্ততম সড়কে বাহনটি যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাটারিচালিত রিকশা দায়ী। বর্তমানে রাজধানীর এমন কোনো সড়ক নেই যা ব্যাটারিচালিত রিকশা দখল করে রাখেনি। এককথায় নিষিদ্ধ এসব ব্যাটারি রিকশা ঢাকার সড়কে মহামারি রূপ নিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সরকারি কোনো দপ্তর বা সংস্থার কাছেই ঢাকাসহ সারা দেশে কী পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। মূলত চাঁদা দিয়ে অনুমোদনহীন এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার চলাচল শুরু করে। এলাকাভেদে প্রতিটি রিকশাকে মাসে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। আর অবৈধ ওই চাঁদা আদায়ের বৈধতা তৈরিতে কার্ড সিস্টেম চালু করা হয়। আর চাঁদার ওই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা এবং শ্রমিক নেতারা। ভুক্তভোগী, রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ বড় শহরের সকল সড়কে ব্যাটারি রিকশা অবাধ চলাচলের সুযোগ দেয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের মতে, কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি না দিলেও মৌন সম্মতি দিয়েছে। তা না হলে তো এসব রিকশা চলতে পারতো না। ধারণা করা হচ্ছে রাজধানীতে চলাচল করছে প্রায় ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা। আর এলাকাভেদে ওসব বাহনের মাসিক চাঁদার অঙ্কও আলাদা। আর চাঁদা আদায়ে শৃঙ্খলা রাখতে নির্দিষ্ট প্রতীকের কার্ড ব্যবহার করা হয়। আর ওই কার্ড দিয়েই এলাকাভিত্তিক চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়। তাছাড়া রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতি ব্যাটারিতে গ্যারেজ মালিকরা আলাদা ৩৫ থেকে ৫৫ টাকা করে নেন। সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীরা যখন ২০২৪ সালের জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে, তখন বেশিরভাগ সড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। কমপ্লিট শাটডাউনে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। তাছাড়া বিভিন্ন সড়ক অবরোধের কারণেও গণপরিবহনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছিল। ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীর সড়কে ব্যাপক হারে বেড়ে যায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল। তারপর আগস্ট মাসে উড়াল সড়ক, উড়াল মহাসড়ক ও বিমানবন্দরেও ব্যাটারি রিকশা চলতে শুরু করে। তারপর থেকে ওসব অবৈধ যানকে আর ঠেকানো যাচ্ছে না। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে রাজধানীসহ দেশজুড়ে কি পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে তার হিসাব নেই। এমন পরিস্থিতিতে ওসব যান নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। ওসব যান চলাচলে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির কথাও বলা হচ্ছে। কারণ বিদ্যমান নীতিমালায় অনিরাপদ তিন চাকার যান চলাচলের সুযোগ নেই। সূত্র আরো জানায়, রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে গত বছরের ১৫ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। ওসব যান বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারও ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজার ৬৩০টি আর উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ২৮ হাজার ১৫২টি। নিবন্ধিত দুই লাখ ১০ হাজার ৭০০ রিকশার সবই প্যাডেলচালিত। তার বাইরে রাজধানীতে সব রিকশাই অনিবন্ধিত। যদিও রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে ওয়ার্কশপ ও চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আবার চলতি অর্থবছরে রিকশায় ব্যবহৃত ব্যাটারির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যা ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিরুৎসাহিত করা যায়। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এদিকে বিআরটিএ সাধারণত দেশজুড়ে যান্ত্রিক যান চলাচলের অনুমতি দেয়। আর আঞ্চলিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (আরটিসি) অঞ্চলভিত্তিক ছোট যান চলাচলের অনুমতি দেয়। রাজধানীতে পুলিশ কমিশনার পদাধিকারবলে ওই কমিটির প্রধান। আর রাজধানীর বাইরে জেলা প্রশাসক কমিটির প্রধান হিসেবে যান চলাচলের অনুমতি দেন। আর সিটি করপোরেশন অযান্ত্রিক যান চলাচলের অনুমতি দেয়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ অযান্ত্রিক যান চলাচল করছে। যদিও ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। বিআরটিএও ওসব যানের নিবন্ধন দেয় না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি কোন প্রতিষ্ঠান দেবে তা পরিষ্কার নয়। কারণ যে প্রতিষ্ঠান ওসব যান চলাচলের অনুমোদন দেবে ওই প্রতিষ্ঠানকেই রুট পারমিট, সংখ্যাগত ও পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই অবৈধ বাহনটি নির্মাণ ও সংযোজন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছোট ছোট ওয়ার্কশপে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি ও রূপান্তর করা হচ্ছে। আর বিদ্যুৎনির্ভর ব্যাটারির ব্যবহারকে বৈদ্যুতিক মোটরযানের আওতায় এনে পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হয়। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু ওই নীতিমালায় রিকশার মতো তিন চাকার বাহনের উল্লেখ না থাকায় রিকশার জন্য আলাদা নীতিমালা করার কথা ভাবা হচ্ছে। আর রিকশাকে বৈদ্যুতিক যানের স্বীকৃতি দেয়া হলে ওসব যান চলাচলের সীমানা, চার্জিং স্টেশন, গতিসীমা, যানের অনুমোদন, চালকের লাইসেন্সসহ সব কিছুই নির্ধারণ করা হবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক জানান, ব্যাটারি রিকশার নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা জরুরি। একটা আইন থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে। আর বৈধ অনুমোদনের জন্য নতুন নকশা হয়েছে। একই বিষয়ে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জানান, এখন অবশ্য আর আগের মতো নিয়মিত চাঁদা দিতে হচ্ছে না। তবে নতুন করে আবার কিছু জায়গায় চাঁদা চাওয়া হচ্ছে বলে খোঁজ মিলছে। এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, এ জাতীয় যানের অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ কোনোটাই বিআরটিএর হাতে নেই। তবে সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ যানের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স